জাতীয় শিশু নীতি ২০১১
জাতীয় শিশু নীতি ২০১১
১। ভূমিকা:
শিশু জাতি গঠনের মূল ভিত্তি। স্বাধীনতার পর সুখী, সমৃদ্ধ, সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বক্ষেত্রে সকল শিশুকে পূর্ণ মর্যাদাবান মানুষরূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে শিশুসহ সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার সন্নিবেশিত রয়েছে। সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে অনুচ্ছেদ ২৭, ২৮, ২৯, ৩১, ৩৪, ৩৭,৩৮, ৩৯, ৪০,৪১ এ সকল নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ২৮(৪) এ শিশুদের অগ্রগতির জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক বিশেষ বিধান প্রণয়ন করার বিষয় সন্নিবেশিত রয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১, ১৪, ১৫,১৬,১৭,১৮,১৯,২০ এ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে শিশুদের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা, সুযোগের সমতা, অধিকার ও কর্তব্য এবং জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রণীত হয় শিশু আইন ১৯৭৪ যা যুগোপযোগীকরণের মাধ্যমে শিশু আইন ২০১১ রূপে প্রণয়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ (Convention on the Rights of the Child, CRC) ১৯৮৯ এ স্বাক্ষর ও অনুসমর্থনকারী প্রথম রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৯৪ সালে জাতীয় শিশু নীতি প্রণয়ন করা হয়।
পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রাসঙ্গিক সকল ক্ষেত্রে শিশুর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করা একান্ত আবশ্যক। শিশুর সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা ও অধিকার সংরক্ষণের মাধ্যমে একটি সৎ, দেশপ্রেমিক ও কর্মক্ষম ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যত্নশীল ও সক্রিয়। বাংলাদেশের ১৮ বছরের কম বয়সের জনসংখ্যা ৬ কোটি ৩০ লক্ষ যা মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ[1]। মানব সম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে যা বিভিন্ন মানদন্ডের বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়। শিশু এবং মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জিত হয়েছে। শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে UN Millennium Award 2010 প্রদান করা হয়। সম্প্রসারিত টিকা প্রদান কার্যক্রমের (EPI) আওতায় শতকরা ৮৭ ভাগ শিশুকে আনা হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে জেন্ডার সমতা অর্জিত হয়েছে যা সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা (MDG-3) পূরণ করেছে। বিদ্যালয় থেকে শিশুদের ঝরে পড়ার হার হ্রাস করার লক্ষ্যে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে।
শিশু অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দারিদ্র প্রধান অন্তরায়। বৃহৎ অংশের শিশুদের দারিদ্র বিমোচন, পুষ্টি, স্বাস্থ্য সেবা, নিরাপদ আশ্রয়, পয়ঃনিষ্কাশন ইত্যাদি সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসন, পর্যায়ক্রমে শিশু শ্রম নিরসন, শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার বন্ধ করা ও তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে শিক্ষা ও বিনোদনের উপযুক্ত সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন কার্যক্রম।
২০০৬ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ সনদে প্রতিবন্ধী শিশুদের অন্যান্য সকল শিশুদের সাথে সমতার ভিত্তিতে মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ভোগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হযেছে যেখানে বাংলাদেশ সরকার স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর করেছে। সনদে শিশুদের স্বার্থ বিবেচনায় প্রতিবন্ধী শিশুদের স্বার্থ সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শিশু নির্যাতন বন্ধ করা, বিশেষ করে কন্যা শিশুদের প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য ও নির্যাতন বন্ধ করা ও তাদের নিরাপত্তা বিধান করা অন্যতম লক্ষ্য।
বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধিত পরিবর্তন, উন্নয়ন ক্ষেত্রে নিত্য নতুন চাহিদা ও জাতিসংঘ শিশু অধিকার কমিটি (CRC Committee) সুপারিশমালার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৪ সালে প্রণীত জাতীয় শিশু নীতি যুগোপযোগীকরণের মধ্য দিয়ে সময়োপযোগী ও আধুনিক একটি শিশু নীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ বাংলাদেশের শিশুদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিনির্মানে একটি সুদূরপ্রসারী রূপকল্প। শিশুদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষার্থে জাতীয় সকল উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন, পরিকল্পনা গ্রহণ, কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।
২. সংজ্ঞা:
২.১ শিশু: শিশু বলতে আঠারো বছরের কম বয়সী বাংলাদেশের সকল ব্যক্তিকে বুঝাবে। দেশের প্রচলিত কোন আইনে এর ভিন্নতা থাকলে এই নীতির আলোকে প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে সামঞ্জস্য বিধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
২.২ কিশোর কিশোরীঃ কিশোর-কিশোরী বলতে ১৪ বছর থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদেরকে বুঝাবে।
৩. পরিধি:
জাতীয় শিশু নীতি বাংলাদেশের নাগরিক সকল শিশুর ক্ষেত্রে বৈষম্যহীনভাবে প্রযোজ্য হবে।
৪. মূলনীতি:
বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক সনদসমূহের আলোকে শিশু অধিকার নিশ্চিতকরণ।
শিশু দারিদ্র্য বিমোচন।
শিশুর প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন ও বৈষম্য দূরীকরণ।
কন্যা শিশুর প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন ও বৈষম্য দূরীকরণ।
শিশুর সার্বিক সুরক্ষা ও সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে শিশুদের অংশগ্রহণ ও মতামত গ্রহণ।
৫. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
৫.১ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, নিরাপত্তা, বিনোদন ও অন্যান্য অধিকারের ক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গগত, ধর্মীয়, জাতিগত, পেশাগত, সামাজিক, আঞ্চলিক ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয় নির্বিশেষে সকল শিশু ও কিশোর কিশোরীর জন্য মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের সর্বোত্তম উন্নয়ন ও বিকাশ নিশ্চিত করা হবে।
৫.২ কন্যা শিশু এবং প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের প্রয়োজন অনুযায়ী সুবিধা প্রদানের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৫.৩ শিক্ষা ও শিশু বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে শিশুদের দেশ সম্পর্কে আগ্রহী ও সচেতন করে গড়ে তোলা হবে যাতে তারা সৎ, দেশপ্রেমিক ও দায়িত্বশীল নাগরিক রূপে বিকাশ লাভ করতে পারে।
৫.৪ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে শিক্ষার অপরিহার্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে শিশুদের একটি বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তোলা হবে যাতে তারা ভবিষ্যতে দেশ ও বিশ্বের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হয়।
৫.৫ শিশুদের জন্য অনুকূল পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়টি নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৫.৬ শিশু ও কিশোর কিশোরীর জীবনকে প্রভাবিত করে এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নে তাদের মতামত প্রতিফলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৫.৭ শিশু অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৬. শিশু অধিকার বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ:
শিশুর নিম্নলিখিত অধিকারসমূহ নিশ্চিত করা ও সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে:
৬.১ শিশুর নিরাপদ জন্ম ও সার্বিক বিকাশ নিশ্চিতকরণ:
৬.১.১ সকল শিশুর নিরাপদ জন্ম গ্রহণ ও বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য, পরিচর্যার মাধ্যমে শিশুর নিরাপদ জন্ম এবং বেড়ে উঠার ব্যবস্থা নেয়া এবং প্রসূতিপূর্ব, প্রসূতিকালীন সময় ও প্রসূতি পরবর্তী প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৬.১.২ শিশুমৃত্যু রোধের ক্ষেত্রে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬.১.৩ মায়ের স্বাস্থ্য ও শিশুর যত্ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কর্মজীবী মায়েদের জন্য বর্ধিত মাতৃত্ব ছুটির ব্যবস্থা করা হবে।
৬.১.৪ কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর সুবিধা প্রদানে কর্মস্থলে দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬.১.৫ শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৬.১.৬ কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৬.২. শিশুর দারিদ্র বিমোচন:
শিশুর দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে শিশুর ক) পুষ্টি, খ) স্বাস্থ্য, গ) সার্বিক সুরক্ষা, ঘ) শিক্ষা এবং ঙ) সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়কে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
৬.২.১ শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নীতি এবং National Plan of Action for Nutritional Intervention কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে হবে ও জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত বিভিন্ন পুষ্টি কার্যক্রমের মাঝে সমন্বয় সাধন করতে হবে। পিতামাতাকে শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণে সচেতন ও উৎসাহিত করতে হবে।
৬.২.২. অনূর্ধ্ব দুই বছরের শিশুদের Protein-Energy Malnutrition (U2PEM) এবং Low Birth Weight (LBW) হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৬.২.৩. পথশিশু সহ সকল দারিদ্র্য শিশুদের পুনর্বাসন ও যথাযথ বিকাশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় (Social Safety Net) সম্প্রসারিত করতে হবে। অতি দারিদ্র্য পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মাঝে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে, যাতে শিশুরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে ও পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে।
৬.৩ শিশু স্বাস্থ্য:
৬.৩.১ সকল শিশুর জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্প্রসারিত টিকা প্রদান কার্যক্রম (EPI), শৈশব-অসুস্থতার সমন্বিত ব্যবস্থাপনা (IMCI) ও নবজাতক স্বাস্থ্য (NBH), প্রজনন স্বাস্থ্য, যৌন সংক্রামক ব্যাধিসমূহ, HIV/AIDS প্রতিরোধসহ সময়োপযোগী অন্যান্য কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
৬.৩.২ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মী এবং চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দক্ষ ধাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করা হবে।
৬.৩.৩ বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মৌলিক তথ্য অন্তর্ভূক্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৬.৩.৪ শিশুর অধিকার এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার উপায় সম্পর্কে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়মিত অবহিতকরণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে।
৬.৩.৫ শিশুদের জন্য নিরাপদ পানির উৎস সুলভ রাখা এবং লবনাক্ত উপকূলীয় এলাকা ও আর্সেনিকযুক্ত পানির এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ হবে।
৬.৩.৬ বিদ্যালয়ে শিশু বান্ধব পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা স্থাপন ও পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
৬.৩.৭ কন্যা শিশু ও কিশোরীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে আলাদা পয়ঃ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৬.৪ শিশুর বিকাশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা (৩ – ৫ বছর):
৬.৪.১ শিশুর আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকে ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে সর্বজনীন মানবিক বৃত্তির সুষ্ঠু বিকাশের পরিবেশ নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করা হবে।
৬.৪.২ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র চালু করত এসব কেন্দ্রের শিক্ষকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৬.৪.৩ ৩-৫বছর বয়সী শিশুদের জন্য শিশু বিকাশ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
৬.৫ শিশু শিক্ষাঃ
৬.৫.১ প্রাথমিক শিক্ষা বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। অর্থনৈতিক, নৃতাত্ত্বিক ও অন্যান্য কারণে পশ্চাৎপদ ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠির শিশুদের জন্য শিক্ষাপোকরণসহ উৎসাহ প্রদানকারী বিশেষ সুবিধাদি প্রদান করা হবে।
৬.৫.২ সকল শিশুকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার আওতায় আনা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পড়া রোধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬.৫.৩ আধুনিক বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের লক্ষ্যে মানসম্মত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে।
৬.৫.৪ শিক্ষার সর্বস্তরে সাংবিধানিক নিশ্চয়তার প্রতিফলন ঘটানো এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের সচেতন করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৬.৫.৫ মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৬.৫.৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল ধরণের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করা এবং শাস্তির ফলস্বরূপ কোনো শিশু ও কিশোর-কিশোরীর যেন শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি না হয় সে লক্ষ্যে শিশু বান্ধব শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রবর্তন করা হবে।
৬.৫.৭ দেশের প্রচলিত বিভিন্ন ধারার শিক্ষার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হবে যাতে সকল ধারার শিক্ষার্থীরা সমভাবে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ লাভ এবং দেশের উন্নয়ন চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়।
৬.৫.৮ শিশুদের শিক্ষার মান ও উৎকর্ষ বৃদ্ধির জন্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং এ লক্ষ্যে শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু বান্ধব উন্নত পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
৬.৫.৯ ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিশুদের জন্য শিশুতোষ বই-পুস্তক, পত্রিকা, সিনেমা ও সুকুমার কলা চর্চার সামগ্রী বিনামূল্যে বা ভর্তূকি মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হবে। নানা ধরণের সহজ ও আকর্ষনীয় শিক্ষা উপকরণ, মডেল, ছড়া, গল্প, গান ও খেলার মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬.৫.১০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক বা বিশেষ শিক্ষা যেমন, ক্রীড়া শিক্ষা, স্কাউট, গার্লস গাইড ইত্যাদির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৬.৫.১১ মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডায় স্ব-স্ব ধর্মের শিশুদেরকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
৬.৫.১২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রমে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও কার্যকর সহায়তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিচালনা ব্যবস্থা আরও উন্নত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৬.৬ শিশুর বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম:
৬.৬.১ শিশুর জন্য মানসম্পন্ন বিনোদন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য খেলার মাঠ, খেলার সরঞ্জাম রাখা, এলাকাভিত্তিক শিশু পার্ক স্থাপন এবং নগর পরিকল্পনায় আবশ্যিকভাবে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ অন্তর্ভূক্ত করা হবে। দুর্যোগকালীন সময় ও তার পরবর্তীতে আশ্রয়কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে।
৬.৬.২ শিশুরা যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশাত্মবোধ, মানবিক মূল্যবোধ এবং সমাজ, দেশ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আদর্শ, জাতীয় চার নেতার জীবন ও কর্ম এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে এই উদ্দেশ্যে শিশুতোষ চলচ্চিত্র, নাটক, চিত্রকলা ও শিল্পের অন্যান্য শাখায় শিশুদের চর্চা ও অংশগ্রহণের পর্যাপ্ত সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।
৬.৬.৩ প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিনোদনমূলক কার্যক্রমের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং লাইব্রেরী সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য তাদের উপযোগী বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে।
৬.৭ শিশুর সুরক্ষা:
৬.৭.১ সকল প্রকার সহিংসতা, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন এবং শোষণের বিরুদ্ধে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। শিশুদের উপর সহিংসতা, নির্যাতন ও অবহেলা বন্ধ করার লক্ষ্যে কার্যকর ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
৬.৭.২ আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু এবং বিচার প্রক্রিয়ায় শিশু অংশগ্রহণের অধিকার শিশু আইনের অধীনে নিশ্চিত করা হবে।
৬.৭.৩ শিশুদের মাদক ব্যবহার প্রতিরোধ উপযুক্ত পদক্ষেপ এবং মাদকাসক্ত শিশুদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৬.৭.৪. শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার, প্রলোভন বা জোর করে জড়িত করা হবে না।
6.8 প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য বিশেষ কার্যক্রম:
৬.৮.১ জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী অধিকার সনদ অনুযায়ী সকল ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুর স্বীকৃতি ও সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
৬.৮.২ প্রতিবন্ধী শিশুদের সমাজের মূলধারায় একীভূত থাকা এবং শিক্ষাসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতার ভিন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হবে।
৬.৮.৩ যে সমস্ত শিশু অনিবার্য কারণে শিক্ষার মূলধারায় অন্তর্ভূক্ত হতে পারবে না, শুধুমাত্র সেইসব শিশুর জন্য বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থা বিবেচনা করা হবে।
৬.৮.৪ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
৬.৮.৫ প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ ও নির্ণয়ের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ এবং পারিবারিক পরিবেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের লালন পালন ও বিকাশের জন্য তাদের পরিবারকে বিশেষ সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
৬.৮.৬ প্রতিবন্ধিতার কারনে কোন শিশু যেন জাতীয় শিশু নীতির আওতায় কোন প্রকার অধিকার, সুবিধা ও সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করতে সকল অবকাঠামো, সুবিধা ও সেবাসমূহ সকলের জন্য প্রবেশগম্য করা হবে।
৬.৯ অটিস্টিক শিশুর জন্য বিশেষ কার্যক্রম:
৬.৯.১ অটিস্টিক শিশুদের অধিকাংশই স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন,তাই তাদের সমাজে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
৬.৯.২ অটিস্টিক শিশুদের জন্য সুনির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা পদ্ধতি এবং উপকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৬.৯.৩ অটিস্টিক শিশুদের যেহেতু সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বৈকল্য থাকে, সেহেতু তাদের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করার জন্য পরিবার বা তার বাবা মাকে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৬.৯.৪ অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
৬.৯.৫ দুর্যোগ ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করা হবে।
৬.১০ শিশুর জন্ম নিবন্ধন:
৬.১০.১ সকল শিশুর জন্মের অব্যবহিত পরেই জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করা হবে।
৬.১০.২ জন্ম নিবন্ধন আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং এর প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।
৬.১১ সংখ্যালঘু ও নৃতাত্ত্বিক শিশুর জন্য বিশেষ কার্যক্রম :
৬.১১.১ নৃতাত্ত্বিক ও সংখ্যালঘু শিশুর উন্নয়ন ও বিকাশের সকল অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
৬.১১.২ নৃতাত্ত্বিক ও সংখ্যালঘু শিশু যাতে তার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অক্ষুন্ন রেখে বিকাশ লাভ করতে পারে সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬.১২ দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে শিশুর সুরক্ষা:
৬.১২.১ দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্ত্ততি গ্রহণ এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসনের সময় শিশুর নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিরাপত্তা বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে।
৬.১২.২ দুর্যোগের জরুরি অবস্থায় কন্যা শিশুদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকরণের প্রাপ্যতা ও পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬.১২.৩ দুর্যোগকালীন জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় শিশুদের বিপদ কাটিয়ে উঠার ক্ষমতার উপর গুরুত্ব দিয়ে বস্ত্তগত সাহায্যের পাশাপাশি শিশু ও তাদের অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় মনোসামাজিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
৬.১২.৪ সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমকে আরো শিশু-বান্ধব করা এবং পরিচর্যা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এতিম ও অসহায় শিশুদের জরুরি অবস্থায় সুরক্ষার জন্য কর্মকৌশল প্রবর্তন করা হবে।
৬.১২.৫ দুর্যোগকালীন জরুরি অবস্থায় খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম যেন শিশুর চাহিদা পূরণ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও বিতরণ সামগ্রীর মধ্যে শিশুর খেলনা সামগ্রী অন্তর্ভূক্ত করতে হবে যাতে করে শিশু দুর্যোগসংক্রান্ত ভয়ভীতি কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।
৬.১২.৬ দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি অবস্থায় খাদ্যের পাশাপাশি শিশুর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হবে। সংক্রামক ও পানি বাহিত রোগ থেকে রক্ষা এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যে শিক্ষার সুবিধা পুনর্বহালের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৬.১২.৭ গর্ভবতী ও প্রসূতি এবং নবজাতকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, যেমন ব্রেষ্ট ফিডিং কর্ণার রাখা হবে।
৬.১৩ শিশুদের অংশগ্রহণ ও মতামত গ্রহণ:
শিশুর অধিকার ও উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/প্রতিষ্ঠানে শিশুর উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গৃহীত সকল কার্যক্রমে তাদের মতামত ও অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হবে।
৭. কিশোর কিশোরীদের উন্নয়ন:
৭.১ কিশোর কিশোরীদের বিশেষ প্রয়োজনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৭.২ কিশোর কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যথাযথ বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৭.৩ কিশোর কিশোরীদের শারীরবৃত্তীয় ও আবেগজনিত বিষয়গুলি বিবেচনায় রেখে পারিপার্শ্বিক পরিবেশে প্রজনন স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৭.৪ কিশোর কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা, বিয়ে, পাচার, বাণিজ্যিকভাবে যৌন কাজে বাধ্য করা এবং অন্যান্য সকল ক্ষতিকর কাজ থেকে রক্ষার মাধ্যমে তাদের সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
৮. শিশুশ্রম নিরসনের পদক্ষেপসমূহ:
শিশুশ্রম পর্যায়ক্রমে নিরসন করা হবে। বাস্তবতার নিরিখে দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে অনেক শিশু বিভিন্ন শ্রমে নিয়োজিত। শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০ এর আলোকে নিম্নোক্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৮.১ ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুকে সার্বক্ষনিক কর্মী হিসাবে নিয়োগ হতে বিরত রাখতে হবে।
৮.২ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে দুঃস্থ ও নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থাপন্ন শিশুদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষার পাশাপাশি মাসিক মাসোহারা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে,যাতে করে তারা পড়াশুনা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে।
৮.৩ শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনুকূল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে শিশুকে যেন কোন ধরণের অসামাজিক বা অমর্যাদাকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা না হয় তা নিশ্চিন্ত করতে হবে।
৮.৪ কর্মস্থলে দৈনিক কর্মঘন্টা ও এর মধ্যবর্তী নির্দিষ্ট সময়ে কর্মবিরতি এবং বিনিময় মজুরী নিশ্চিত করা হবে।
৮.৫ শিক্ষা ও বিনোদন শিশুর মৌলিক অধিকার, আর তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কর্মঘন্টা অতিক্রান্ত হবার পর নিয়োগকর্তা উক্ত শিশু শ্রমিকের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকবে।
৮.৬ কর্মকালীন সময়ে শিশু কোন ধরণের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে বা অসুস্থ অনুভব করলে মালিকপক্ষ বা নিয়োগকর্তা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
৮.৭ গৃহকর্মে বা অন্যান্য কর্মে নিয়োজিত শিশুদের প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার বাবা-মা বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে মিলিত হওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৮.৮ গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুরা সাধারণত সার্বক্ষনিক কর্মী হিসেবে নিযুক্ত থাকে বিধায় তাদের লেখা-পড়া, থাকা-খাওয়া, আনন্দ-বিনোদন নিশ্চিত করা এবং তাকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো থেকে বিরত রাখতে হবে।
৮.৯ যে সকল প্রতিষ্ঠানে শিশুরা নিয়োজিত আছে, সেখানে শিশুরা যেন কোনরূপ শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে হবে।
৮.১০ ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শ্রমসহ বিভিন্ন ধরনের শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের প্রত্যাহার করতে হবে।
৮.১১ শ্রমজীবী শিশুদের দারিদ্রে্যর চক্র হতে বের করে আনার লক্ষ্যে তাদের পিতামাতাদের আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে।
৮.১২ শ্রমজীবী শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য বৃত্তি ও আনুতোষিক প্রদান করতে হবে।
৮.১৩ শিশুশ্রমে ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে পিতামাতা, সাধারণ জনগণ ও সুশীল সমাজের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৮.১৪ বাংলাদেশ হতে ২০১৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শিশুশ্রম নির্মূলের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কৌশল ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
৯. বাস্তবায়ন কৌশলসূহ:
৯.১ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো:
৯.১.১ শিশু অধিকার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে গঠিত জাতীয় নারী ও শিশু উন্নয়ন পরিষদ (NCWCD) এর কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। এই কমিটির মাধ্যমে মা ও শিশুর জন্য সর্বোত্তম উন্নয়ন ও সুরক্ষা, শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়ন এবং এতদসংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধানের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হবে।
৯.১.২ শিশুর উন্নয়ন ও অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্ত দপ্তরসমূহের অবকাঠামোর উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
৯.১.৩ জাতীয় পর্যায়ে আইনের মাধ্যমে ‘শিশুদের জন্য ন্যায়পাল’ (Ombudsman for Children) নিয়োগ দেয়া হবে। ‘শিশুদের জন্যে ন্যায়পাল’ জাতীয় কর্মসূচিতে শিশুদের অধিকার ও কল্যাণ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এবং জাতিসংঘ সনদ বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে ভূমিকা পালন করবে।
৯.১.৪ প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে উপ-সচিব ও তদুর্ধ্ব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে ফোকাল পয়েন্ট ও আরেকজনকে বিকল্প ফোকাল পয়েন্টের দায়িত্ব প্রদান করা হবে। এসকল কর্মকর্তাগণ শিশু বিষয়ক কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে প্রতি তিন মাস অন্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতির প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
১০. সরকারি ও বেসরকারি কর্মকান্ডের সমন্বয় :
শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি উদ্যোগকে সুসংহত ও আরও ফলপ্রসু করার লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থাসমূহের সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা হবে। নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন উভয় ক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি কর্মকান্ডের সমন্বয় নিশ্চিত করা হবে।
১১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা:
শিশুর উন্নয়ন ও অধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ এবং কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়মিত মূল্যায়ন করা হবে।
১২. গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন:
শিশু বিষয়ক কার্যক্রমের উত্তরোত্তর উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গবেষণা, চলমান উদ্যোগসমূহের যথাযথ পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়নের নিমিত্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
১৩. শিশু নীতি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ সংস্থান :
দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় শিশুদের উন্নয়ন একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে। এ প্রেক্ষিতে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিশু অধিকার বাস্তবায়ন ও শিশু উন্নয়নের বিষয়সমূহ সুনির্দিষ্টভাবে অর্ন্তভূক্ত এবং পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
১৪. আইন ও বিধি বিধান প্রণয়ন :
জাতীয় শিশু নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন, বিধি-বিধান, নির্দেশিকা ইত্যাদি প্রণয়ন করা হবে।
১। ভূমিকা:
শিশু জাতি গঠনের মূল ভিত্তি। স্বাধীনতার পর সুখী, সমৃদ্ধ, সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বক্ষেত্রে সকল শিশুকে পূর্ণ মর্যাদাবান মানুষরূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে শিশুসহ সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার সন্নিবেশিত রয়েছে। সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে অনুচ্ছেদ ২৭, ২৮, ২৯, ৩১, ৩৪, ৩৭,৩৮, ৩৯, ৪০,৪১ এ সকল নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ২৮(৪) এ শিশুদের অগ্রগতির জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক বিশেষ বিধান প্রণয়ন করার বিষয় সন্নিবেশিত রয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১, ১৪, ১৫,১৬,১৭,১৮,১৯,২০ এ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে শিশুদের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা, সুযোগের সমতা, অধিকার ও কর্তব্য এবং জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রণীত হয় শিশু আইন ১৯৭৪ যা যুগোপযোগীকরণের মাধ্যমে শিশু আইন ২০১১ রূপে প্রণয়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ (Convention on the Rights of the Child, CRC) ১৯৮৯ এ স্বাক্ষর ও অনুসমর্থনকারী প্রথম রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৯৪ সালে জাতীয় শিশু নীতি প্রণয়ন করা হয়।
পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রাসঙ্গিক সকল ক্ষেত্রে শিশুর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করা একান্ত আবশ্যক। শিশুর সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা ও অধিকার সংরক্ষণের মাধ্যমে একটি সৎ, দেশপ্রেমিক ও কর্মক্ষম ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যত্নশীল ও সক্রিয়। বাংলাদেশের ১৮ বছরের কম বয়সের জনসংখ্যা ৬ কোটি ৩০ লক্ষ যা মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ[1]। মানব সম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে যা বিভিন্ন মানদন্ডের বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়। শিশু এবং মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জিত হয়েছে। শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে UN Millennium Award 2010 প্রদান করা হয়। সম্প্রসারিত টিকা প্রদান কার্যক্রমের (EPI) আওতায় শতকরা ৮৭ ভাগ শিশুকে আনা হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে জেন্ডার সমতা অর্জিত হয়েছে যা সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা (MDG-3) পূরণ করেছে। বিদ্যালয় থেকে শিশুদের ঝরে পড়ার হার হ্রাস করার লক্ষ্যে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে।
শিশু অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দারিদ্র প্রধান অন্তরায়। বৃহৎ অংশের শিশুদের দারিদ্র বিমোচন, পুষ্টি, স্বাস্থ্য সেবা, নিরাপদ আশ্রয়, পয়ঃনিষ্কাশন ইত্যাদি সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসন, পর্যায়ক্রমে শিশু শ্রম নিরসন, শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার বন্ধ করা ও তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে শিক্ষা ও বিনোদনের উপযুক্ত সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন কার্যক্রম।
২০০৬ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ সনদে প্রতিবন্ধী শিশুদের অন্যান্য সকল শিশুদের সাথে সমতার ভিত্তিতে মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ভোগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হযেছে যেখানে বাংলাদেশ সরকার স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর করেছে। সনদে শিশুদের স্বার্থ বিবেচনায় প্রতিবন্ধী শিশুদের স্বার্থ সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শিশু নির্যাতন বন্ধ করা, বিশেষ করে কন্যা শিশুদের প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য ও নির্যাতন বন্ধ করা ও তাদের নিরাপত্তা বিধান করা অন্যতম লক্ষ্য।
বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধিত পরিবর্তন, উন্নয়ন ক্ষেত্রে নিত্য নতুন চাহিদা ও জাতিসংঘ শিশু অধিকার কমিটি (CRC Committee) সুপারিশমালার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৪ সালে প্রণীত জাতীয় শিশু নীতি যুগোপযোগীকরণের মধ্য দিয়ে সময়োপযোগী ও আধুনিক একটি শিশু নীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ বাংলাদেশের শিশুদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিনির্মানে একটি সুদূরপ্রসারী রূপকল্প। শিশুদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষার্থে জাতীয় সকল উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন, পরিকল্পনা গ্রহণ, কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।
২. সংজ্ঞা:
২.১ শিশু: শিশু বলতে আঠারো বছরের কম বয়সী বাংলাদেশের সকল ব্যক্তিকে বুঝাবে। দেশের প্রচলিত কোন আইনে এর ভিন্নতা থাকলে এই নীতির আলোকে প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে সামঞ্জস্য বিধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
২.২ কিশোর কিশোরীঃ কিশোর-কিশোরী বলতে ১৪ বছর থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদেরকে বুঝাবে।
৩. পরিধি:
জাতীয় শিশু নীতি বাংলাদেশের নাগরিক সকল শিশুর ক্ষেত্রে বৈষম্যহীনভাবে প্রযোজ্য হবে।
৪. মূলনীতি:
বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক সনদসমূহের আলোকে শিশু অধিকার নিশ্চিতকরণ।
শিশু দারিদ্র্য বিমোচন।
শিশুর প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন ও বৈষম্য দূরীকরণ।
কন্যা শিশুর প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন ও বৈষম্য দূরীকরণ।
শিশুর সার্বিক সুরক্ষা ও সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে শিশুদের অংশগ্রহণ ও মতামত গ্রহণ।
৫. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
৫.১ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, নিরাপত্তা, বিনোদন ও অন্যান্য অধিকারের ক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গগত, ধর্মীয়, জাতিগত, পেশাগত, সামাজিক, আঞ্চলিক ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয় নির্বিশেষে সকল শিশু ও কিশোর কিশোরীর জন্য মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের সর্বোত্তম উন্নয়ন ও বিকাশ নিশ্চিত করা হবে।
৫.২ কন্যা শিশু এবং প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের প্রয়োজন অনুযায়ী সুবিধা প্রদানের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৫.৩ শিক্ষা ও শিশু বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে শিশুদের দেশ সম্পর্কে আগ্রহী ও সচেতন করে গড়ে তোলা হবে যাতে তারা সৎ, দেশপ্রেমিক ও দায়িত্বশীল নাগরিক রূপে বিকাশ লাভ করতে পারে।
৫.৪ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে শিক্ষার অপরিহার্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে শিশুদের একটি বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তোলা হবে যাতে তারা ভবিষ্যতে দেশ ও বিশ্বের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হয়।
৫.৫ শিশুদের জন্য অনুকূল পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়টি নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৫.৬ শিশু ও কিশোর কিশোরীর জীবনকে প্রভাবিত করে এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নে তাদের মতামত প্রতিফলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৫.৭ শিশু অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৬. শিশু অধিকার বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ:
শিশুর নিম্নলিখিত অধিকারসমূহ নিশ্চিত করা ও সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে:
৬.১ শিশুর নিরাপদ জন্ম ও সার্বিক বিকাশ নিশ্চিতকরণ:
৬.১.১ সকল শিশুর নিরাপদ জন্ম গ্রহণ ও বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য, পরিচর্যার মাধ্যমে শিশুর নিরাপদ জন্ম এবং বেড়ে উঠার ব্যবস্থা নেয়া এবং প্রসূতিপূর্ব, প্রসূতিকালীন সময় ও প্রসূতি পরবর্তী প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৬.১.২ শিশুমৃত্যু রোধের ক্ষেত্রে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬.১.৩ মায়ের স্বাস্থ্য ও শিশুর যত্ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কর্মজীবী মায়েদের জন্য বর্ধিত মাতৃত্ব ছুটির ব্যবস্থা করা হবে।
৬.১.৪ কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর সুবিধা প্রদানে কর্মস্থলে দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬.১.৫ শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৬.১.৬ কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৬.২. শিশুর দারিদ্র বিমোচন:
শিশুর দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে শিশুর ক) পুষ্টি, খ) স্বাস্থ্য, গ) সার্বিক সুরক্ষা, ঘ) শিক্ষা এবং ঙ) সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়কে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
৬.২.১ শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নীতি এবং National Plan of Action for Nutritional Intervention কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে হবে ও জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত বিভিন্ন পুষ্টি কার্যক্রমের মাঝে সমন্বয় সাধন করতে হবে। পিতামাতাকে শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণে সচেতন ও উৎসাহিত করতে হবে।
৬.২.২. অনূর্ধ্ব দুই বছরের শিশুদের Protein-Energy Malnutrition (U2PEM) এবং Low Birth Weight (LBW) হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৬.২.৩. পথশিশু সহ সকল দারিদ্র্য শিশুদের পুনর্বাসন ও যথাযথ বিকাশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় (Social Safety Net) সম্প্রসারিত করতে হবে। অতি দারিদ্র্য পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মাঝে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে, যাতে শিশুরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে ও পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে।
৬.৩ শিশু স্বাস্থ্য:
৬.৩.১ সকল শিশুর জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্প্রসারিত টিকা প্রদান কার্যক্রম (EPI), শৈশব-অসুস্থতার সমন্বিত ব্যবস্থাপনা (IMCI) ও নবজাতক স্বাস্থ্য (NBH), প্রজনন স্বাস্থ্য, যৌন সংক্রামক ব্যাধিসমূহ, HIV/AIDS প্রতিরোধসহ সময়োপযোগী অন্যান্য কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
৬.৩.২ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মী এবং চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দক্ষ ধাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করা হবে।
৬.৩.৩ বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মৌলিক তথ্য অন্তর্ভূক্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৬.৩.৪ শিশুর অধিকার এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার উপায় সম্পর্কে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়মিত অবহিতকরণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে।
৬.৩.৫ শিশুদের জন্য নিরাপদ পানির উৎস সুলভ রাখা এবং লবনাক্ত উপকূলীয় এলাকা ও আর্সেনিকযুক্ত পানির এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ হবে।
৬.৩.৬ বিদ্যালয়ে শিশু বান্ধব পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা স্থাপন ও পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
৬.৩.৭ কন্যা শিশু ও কিশোরীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে আলাদা পয়ঃ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৬.৪ শিশুর বিকাশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা (৩ – ৫ বছর):
৬.৪.১ শিশুর আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকে ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে সর্বজনীন মানবিক বৃত্তির সুষ্ঠু বিকাশের পরিবেশ নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করা হবে।
৬.৪.২ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র চালু করত এসব কেন্দ্রের শিক্ষকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৬.৪.৩ ৩-৫বছর বয়সী শিশুদের জন্য শিশু বিকাশ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
৬.৫ শিশু শিক্ষাঃ
৬.৫.১ প্রাথমিক শিক্ষা বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। অর্থনৈতিক, নৃতাত্ত্বিক ও অন্যান্য কারণে পশ্চাৎপদ ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠির শিশুদের জন্য শিক্ষাপোকরণসহ উৎসাহ প্রদানকারী বিশেষ সুবিধাদি প্রদান করা হবে।
৬.৫.২ সকল শিশুকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার আওতায় আনা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পড়া রোধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬.৫.৩ আধুনিক বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের লক্ষ্যে মানসম্মত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে।
৬.৫.৪ শিক্ষার সর্বস্তরে সাংবিধানিক নিশ্চয়তার প্রতিফলন ঘটানো এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের সচেতন করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৬.৫.৫ মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৬.৫.৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল ধরণের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করা এবং শাস্তির ফলস্বরূপ কোনো শিশু ও কিশোর-কিশোরীর যেন শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি না হয় সে লক্ষ্যে শিশু বান্ধব শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রবর্তন করা হবে।
৬.৫.৭ দেশের প্রচলিত বিভিন্ন ধারার শিক্ষার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হবে যাতে সকল ধারার শিক্ষার্থীরা সমভাবে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ লাভ এবং দেশের উন্নয়ন চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়।
৬.৫.৮ শিশুদের শিক্ষার মান ও উৎকর্ষ বৃদ্ধির জন্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং এ লক্ষ্যে শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু বান্ধব উন্নত পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
৬.৫.৯ ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিশুদের জন্য শিশুতোষ বই-পুস্তক, পত্রিকা, সিনেমা ও সুকুমার কলা চর্চার সামগ্রী বিনামূল্যে বা ভর্তূকি মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হবে। নানা ধরণের সহজ ও আকর্ষনীয় শিক্ষা উপকরণ, মডেল, ছড়া, গল্প, গান ও খেলার মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬.৫.১০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক বা বিশেষ শিক্ষা যেমন, ক্রীড়া শিক্ষা, স্কাউট, গার্লস গাইড ইত্যাদির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৬.৫.১১ মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডায় স্ব-স্ব ধর্মের শিশুদেরকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
৬.৫.১২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রমে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও কার্যকর সহায়তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিচালনা ব্যবস্থা আরও উন্নত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৬.৬ শিশুর বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম:
৬.৬.১ শিশুর জন্য মানসম্পন্ন বিনোদন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য খেলার মাঠ, খেলার সরঞ্জাম রাখা, এলাকাভিত্তিক শিশু পার্ক স্থাপন এবং নগর পরিকল্পনায় আবশ্যিকভাবে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ অন্তর্ভূক্ত করা হবে। দুর্যোগকালীন সময় ও তার পরবর্তীতে আশ্রয়কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে।
৬.৬.২ শিশুরা যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশাত্মবোধ, মানবিক মূল্যবোধ এবং সমাজ, দেশ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আদর্শ, জাতীয় চার নেতার জীবন ও কর্ম এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে এই উদ্দেশ্যে শিশুতোষ চলচ্চিত্র, নাটক, চিত্রকলা ও শিল্পের অন্যান্য শাখায় শিশুদের চর্চা ও অংশগ্রহণের পর্যাপ্ত সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।
৬.৬.৩ প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিনোদনমূলক কার্যক্রমের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং লাইব্রেরী সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য তাদের উপযোগী বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে।
৬.৭ শিশুর সুরক্ষা:
৬.৭.১ সকল প্রকার সহিংসতা, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন এবং শোষণের বিরুদ্ধে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। শিশুদের উপর সহিংসতা, নির্যাতন ও অবহেলা বন্ধ করার লক্ষ্যে কার্যকর ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
৬.৭.২ আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু এবং বিচার প্রক্রিয়ায় শিশু অংশগ্রহণের অধিকার শিশু আইনের অধীনে নিশ্চিত করা হবে।
৬.৭.৩ শিশুদের মাদক ব্যবহার প্রতিরোধ উপযুক্ত পদক্ষেপ এবং মাদকাসক্ত শিশুদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৬.৭.৪. শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার, প্রলোভন বা জোর করে জড়িত করা হবে না।
6.8 প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য বিশেষ কার্যক্রম:
৬.৮.১ জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী অধিকার সনদ অনুযায়ী সকল ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুর স্বীকৃতি ও সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
৬.৮.২ প্রতিবন্ধী শিশুদের সমাজের মূলধারায় একীভূত থাকা এবং শিক্ষাসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতার ভিন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হবে।
৬.৮.৩ যে সমস্ত শিশু অনিবার্য কারণে শিক্ষার মূলধারায় অন্তর্ভূক্ত হতে পারবে না, শুধুমাত্র সেইসব শিশুর জন্য বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থা বিবেচনা করা হবে।
৬.৮.৪ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
৬.৮.৫ প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ ও নির্ণয়ের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ এবং পারিবারিক পরিবেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের লালন পালন ও বিকাশের জন্য তাদের পরিবারকে বিশেষ সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
৬.৮.৬ প্রতিবন্ধিতার কারনে কোন শিশু যেন জাতীয় শিশু নীতির আওতায় কোন প্রকার অধিকার, সুবিধা ও সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করতে সকল অবকাঠামো, সুবিধা ও সেবাসমূহ সকলের জন্য প্রবেশগম্য করা হবে।
৬.৯ অটিস্টিক শিশুর জন্য বিশেষ কার্যক্রম:
৬.৯.১ অটিস্টিক শিশুদের অধিকাংশই স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন,তাই তাদের সমাজে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
৬.৯.২ অটিস্টিক শিশুদের জন্য সুনির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা পদ্ধতি এবং উপকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৬.৯.৩ অটিস্টিক শিশুদের যেহেতু সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বৈকল্য থাকে, সেহেতু তাদের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করার জন্য পরিবার বা তার বাবা মাকে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৬.৯.৪ অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
৬.৯.৫ দুর্যোগ ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করা হবে।
৬.১০ শিশুর জন্ম নিবন্ধন:
৬.১০.১ সকল শিশুর জন্মের অব্যবহিত পরেই জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করা হবে।
৬.১০.২ জন্ম নিবন্ধন আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং এর প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।
৬.১১ সংখ্যালঘু ও নৃতাত্ত্বিক শিশুর জন্য বিশেষ কার্যক্রম :
৬.১১.১ নৃতাত্ত্বিক ও সংখ্যালঘু শিশুর উন্নয়ন ও বিকাশের সকল অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
৬.১১.২ নৃতাত্ত্বিক ও সংখ্যালঘু শিশু যাতে তার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অক্ষুন্ন রেখে বিকাশ লাভ করতে পারে সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬.১২ দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে শিশুর সুরক্ষা:
৬.১২.১ দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্ত্ততি গ্রহণ এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসনের সময় শিশুর নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিরাপত্তা বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে।
৬.১২.২ দুর্যোগের জরুরি অবস্থায় কন্যা শিশুদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকরণের প্রাপ্যতা ও পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬.১২.৩ দুর্যোগকালীন জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় শিশুদের বিপদ কাটিয়ে উঠার ক্ষমতার উপর গুরুত্ব দিয়ে বস্ত্তগত সাহায্যের পাশাপাশি শিশু ও তাদের অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় মনোসামাজিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
৬.১২.৪ সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমকে আরো শিশু-বান্ধব করা এবং পরিচর্যা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এতিম ও অসহায় শিশুদের জরুরি অবস্থায় সুরক্ষার জন্য কর্মকৌশল প্রবর্তন করা হবে।
৬.১২.৫ দুর্যোগকালীন জরুরি অবস্থায় খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম যেন শিশুর চাহিদা পূরণ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও বিতরণ সামগ্রীর মধ্যে শিশুর খেলনা সামগ্রী অন্তর্ভূক্ত করতে হবে যাতে করে শিশু দুর্যোগসংক্রান্ত ভয়ভীতি কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।
৬.১২.৬ দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি অবস্থায় খাদ্যের পাশাপাশি শিশুর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হবে। সংক্রামক ও পানি বাহিত রোগ থেকে রক্ষা এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যে শিক্ষার সুবিধা পুনর্বহালের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৬.১২.৭ গর্ভবতী ও প্রসূতি এবং নবজাতকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, যেমন ব্রেষ্ট ফিডিং কর্ণার রাখা হবে।
৬.১৩ শিশুদের অংশগ্রহণ ও মতামত গ্রহণ:
শিশুর অধিকার ও উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/প্রতিষ্ঠানে শিশুর উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গৃহীত সকল কার্যক্রমে তাদের মতামত ও অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হবে।
৭. কিশোর কিশোরীদের উন্নয়ন:
৭.১ কিশোর কিশোরীদের বিশেষ প্রয়োজনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৭.২ কিশোর কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যথাযথ বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৭.৩ কিশোর কিশোরীদের শারীরবৃত্তীয় ও আবেগজনিত বিষয়গুলি বিবেচনায় রেখে পারিপার্শ্বিক পরিবেশে প্রজনন স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৭.৪ কিশোর কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা, বিয়ে, পাচার, বাণিজ্যিকভাবে যৌন কাজে বাধ্য করা এবং অন্যান্য সকল ক্ষতিকর কাজ থেকে রক্ষার মাধ্যমে তাদের সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
৮. শিশুশ্রম নিরসনের পদক্ষেপসমূহ:
শিশুশ্রম পর্যায়ক্রমে নিরসন করা হবে। বাস্তবতার নিরিখে দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে অনেক শিশু বিভিন্ন শ্রমে নিয়োজিত। শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০ এর আলোকে নিম্নোক্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৮.১ ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুকে সার্বক্ষনিক কর্মী হিসাবে নিয়োগ হতে বিরত রাখতে হবে।
৮.২ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে দুঃস্থ ও নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থাপন্ন শিশুদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষার পাশাপাশি মাসিক মাসোহারা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে,যাতে করে তারা পড়াশুনা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে।
৮.৩ শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনুকূল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে শিশুকে যেন কোন ধরণের অসামাজিক বা অমর্যাদাকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা না হয় তা নিশ্চিন্ত করতে হবে।
৮.৪ কর্মস্থলে দৈনিক কর্মঘন্টা ও এর মধ্যবর্তী নির্দিষ্ট সময়ে কর্মবিরতি এবং বিনিময় মজুরী নিশ্চিত করা হবে।
৮.৫ শিক্ষা ও বিনোদন শিশুর মৌলিক অধিকার, আর তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কর্মঘন্টা অতিক্রান্ত হবার পর নিয়োগকর্তা উক্ত শিশু শ্রমিকের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকবে।
৮.৬ কর্মকালীন সময়ে শিশু কোন ধরণের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে বা অসুস্থ অনুভব করলে মালিকপক্ষ বা নিয়োগকর্তা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
৮.৭ গৃহকর্মে বা অন্যান্য কর্মে নিয়োজিত শিশুদের প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার বাবা-মা বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে মিলিত হওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৮.৮ গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুরা সাধারণত সার্বক্ষনিক কর্মী হিসেবে নিযুক্ত থাকে বিধায় তাদের লেখা-পড়া, থাকা-খাওয়া, আনন্দ-বিনোদন নিশ্চিত করা এবং তাকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো থেকে বিরত রাখতে হবে।
৮.৯ যে সকল প্রতিষ্ঠানে শিশুরা নিয়োজিত আছে, সেখানে শিশুরা যেন কোনরূপ শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে হবে।
৮.১০ ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শ্রমসহ বিভিন্ন ধরনের শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের প্রত্যাহার করতে হবে।
৮.১১ শ্রমজীবী শিশুদের দারিদ্রে্যর চক্র হতে বের করে আনার লক্ষ্যে তাদের পিতামাতাদের আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে।
৮.১২ শ্রমজীবী শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য বৃত্তি ও আনুতোষিক প্রদান করতে হবে।
৮.১৩ শিশুশ্রমে ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে পিতামাতা, সাধারণ জনগণ ও সুশীল সমাজের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৮.১৪ বাংলাদেশ হতে ২০১৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শিশুশ্রম নির্মূলের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কৌশল ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
৯. বাস্তবায়ন কৌশলসূহ:
৯.১ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো:
৯.১.১ শিশু অধিকার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে গঠিত জাতীয় নারী ও শিশু উন্নয়ন পরিষদ (NCWCD) এর কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। এই কমিটির মাধ্যমে মা ও শিশুর জন্য সর্বোত্তম উন্নয়ন ও সুরক্ষা, শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়ন এবং এতদসংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধানের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হবে।
৯.১.২ শিশুর উন্নয়ন ও অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্ত দপ্তরসমূহের অবকাঠামোর উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
৯.১.৩ জাতীয় পর্যায়ে আইনের মাধ্যমে ‘শিশুদের জন্য ন্যায়পাল’ (Ombudsman for Children) নিয়োগ দেয়া হবে। ‘শিশুদের জন্যে ন্যায়পাল’ জাতীয় কর্মসূচিতে শিশুদের অধিকার ও কল্যাণ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এবং জাতিসংঘ সনদ বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে ভূমিকা পালন করবে।
৯.১.৪ প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে উপ-সচিব ও তদুর্ধ্ব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে ফোকাল পয়েন্ট ও আরেকজনকে বিকল্প ফোকাল পয়েন্টের দায়িত্ব প্রদান করা হবে। এসকল কর্মকর্তাগণ শিশু বিষয়ক কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে প্রতি তিন মাস অন্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতির প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
১০. সরকারি ও বেসরকারি কর্মকান্ডের সমন্বয় :
শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি উদ্যোগকে সুসংহত ও আরও ফলপ্রসু করার লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থাসমূহের সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা হবে। নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন উভয় ক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি কর্মকান্ডের সমন্বয় নিশ্চিত করা হবে।
১১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা:
শিশুর উন্নয়ন ও অধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ এবং কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়মিত মূল্যায়ন করা হবে।
১২. গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন:
শিশু বিষয়ক কার্যক্রমের উত্তরোত্তর উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গবেষণা, চলমান উদ্যোগসমূহের যথাযথ পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়নের নিমিত্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
১৩. শিশু নীতি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ সংস্থান :
দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় শিশুদের উন্নয়ন একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে। এ প্রেক্ষিতে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিশু অধিকার বাস্তবায়ন ও শিশু উন্নয়নের বিষয়সমূহ সুনির্দিষ্টভাবে অর্ন্তভূক্ত এবং পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
১৪. আইন ও বিধি বিধান প্রণয়ন :
জাতীয় শিশু নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন, বিধি-বিধান, নির্দেশিকা ইত্যাদি প্রণয়ন করা হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন